রহিম আব্দুর রহিম
প্রায় সাড়ে তিনবছর পর ২৪ এপ্রিল ভারত ভ্রমণে এসেছি।কর্মস্থলের ঈদের ছুটি চলছে।শেষ হবে ২৯এপ্রিল,ক্লাস শুরু ৩০ এপ্রিল।দেশের অবস্থা জানার জন্য বিভিন্ন অনলাইন পোর্টালে চোখ বুলাচ্ছিলাম।দিনমান চোখে পড়ছিলো।দেশের ২২তম রাষ্ট্রপতি শাহাবুদ্দিন’র শপথ নেবার সংবাদটি। তাঁকে নিয়ে একটা নিবন্ধ লেখার সকল প্রস্তুতি নেওয়ার পরও তা লেখা সম্ভব হয়নি। কারণ,একটি সংবাদ আমাকে মানসিকভাবে আহত করেছে। বহুল প্রচারিত সিলেটটুডে টুয়েন্টিফোর অনলাইন পোর্টালে ২৪ এপ্রিল রাতে আপলোড করা একটি সংবাদ শিরোনাম ছিলো,’ছেলের মার্বেল খেলা নিয়ে বিরোধে খুন হলেন মা।
‘সংবাদ বডির সারসংক্ষেপ, হবিগঞ্জের মাধবপুরের বহেরা ইউনিয়নের রাজাপুর গ্রাম,ওইগ্রামের দুই কিশোর তোফায়েল ও শামীম মার্বেল খেলতে গিয়ে মারামারিতে জড়িয়ে পড়ে।এই স্বাভাবিক ঘটনাকে কেন্দ্র করে কিশোর তোফায়েলের বাবা শফিক মিয়া ও তার দলবল সংবদ্ধ হয়ে কিশোর শামীমের পরিবারের উপর দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে আক্রমন করে। এতে শামীমের বাবা আব্দুস সালাম(৫৫),শামীমের মা মিনার বেগম(৪৭) ও শামীমসহ এক শিশু আহত হয়।পরে আহতদের চিকিৎসার জন্য উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়।সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শামীমের মা মিনারা বেগম (৪৭)মারা যান।
এই ঘটনায় হয়ত থানায় মামলা হবে,বাদী এবং বিবাদী পক্ষ আদালত আসা যাওয়ার দীর্ঘ পথ পেরিয়ে একদিন বিচারকের রায় শুনতে পারবেন। শামীম-তোফায়েল ওরা দুজনই কিশোর এবং একে অপরের বন্ধু।তা না হলে এক সাথে মার্বেল খেলার কথা নয়।যখন দেশে হরহামেশাই কিশোর গ্যাংদের নেতিবাচক খবর আমরা দেখতে পাচ্ছি সেখানে শামীম–তোফায়েল গ্রামের বিলুপ্ত প্রায় মার্বল খেলছে,এটা বাহ্ বা পাবার কথা,না বাহ্ বা পায় নি।খেলতে গিয়ে ওরা দুজন মারামারিতে জড়িয়ে পড়ে।দুই বন্ধুর মারামারিকে কেন্দ্র করে তোফায়েলের বাবা এবং তার দলবল মারামারিতে জড়াতে পারে না।
এই বাবার মাঝে যদি সত্যিকার অর্থে পিতৃত্ব থাকতো, তবে তিনি ঘটনাটি কেন্দ্রকে তার ছেলে কিশোর তোফায়েল এবং ছেলের বন্ধু শামীমকে তার বাড়িতে ডেকে নিয়ে ঈদ উপলক্ষে তাদের সাধ্যমতো আপ্যায়ন শেষে একটা বিচার করা পারতেন।তিনি দুইজনকে এক জায়গায় বসিয়ে জিজ্ঞেস করতে পারতেন,তোমাদের দুজনকে আমরা একসাথে খেলতে বলেনি,তোমারা নিজেরাই খেলতে গিয়েছো।এরপর কেনো মারামারি করেছো, তার সঠিক জবাব দাও,তা না হলে দুজনকেই শায়েস্তা করবো।এই বলে তাদের বাড়িতে রেখে এই বাবা বাইরে চলে যেতেন।পরে দেখতেন ওরা দুই বন্ধুই মিলে মিশে এই আদর্শ বাবার কাছে ক্ষমা চেয়ে বলতেন,আমাদের মাফ করে দেন,আর এমনটা হবে না
।এতে করে তোফায়েলের (বর্তমান) অভিযুক্ত বাবা শামীমের অন্তকরণে শ্রেষ্ট একজন বাবা হিসাবে আমৃত্যু সম্মান পেতেন। আর এখন? শফিক মিয়া খুনের আসামী হলেন,মা খুন হবার তীব্র জ্বালা শামীমের কিশোর মনে একসময়কার পরমবন্ধু তোফায়েলকে চরমশত্রু হিসেবে দাঁড় করালো।একই সাথে অনেক কিশোর-কিশোরীর বাবা -মায়ের মনে-ধ্যানে মার্বেল খেলাটাই যেনো অভিযুক্ত,অপরাধি এবং দায়ী বলে গণ্য হলো। সন্তান জন্ম দিলেই বাবা হওয়া যায় না।বাবা হতে হলে পিতৃত্ব লাগে।টাকা আর জনবল থাকলে সম্মানী পাওয়া যায় না।
মনে রাখবেন, আপনার টাকা আছে, জনবল প্রচুর; এতে মানুষ আপনাকে ভয় করে,আপনাকে অতিথি করে ওদের কার্য হাসিল করে। (রহিম আব্দুর রহিম,শিক্ষক,কলামিস্ট, নাট্যকার ও শিশু সাহিত্যিক)।
আমরা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।